পরিচিতি ও কার্যাবলীঃ
রেজিস্ট্রেশন বিভাগ বাংলাদেশের প্রাচীনতম সরকারি দপ্তর সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি দপ্তর। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন রেজিস্ট্রেশন বিভাগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশের গণমানুষের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । শতাব্দীর প্রাচীন রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কার্যক্রম এদেশের মানুষ ও মাটি কে ঘিরে আবর্তিত । সম্পত্তি হস্তান্তর, বিভিন্ন প্রকার দলিল রেজিস্ট্রেশন, রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের তথ্যাদি সম্বলিত রেকর্ড সৃজন, সংরক্ষণ ও নিরাপদ হেফাজত করণ এবং বিভিন্ন প্রকার রাজস্ব ও করাদি আদায় রেজিস্ট্রেশন বিভাগের অন্যতম কাজ। রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৬১ টি জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও ৪৯৭ টি সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালিত হয়।
রেজিস্ট্রেশন প্রথা প্রচলনের পটভূমিঃ
ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে এদেশের মানুষ দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে অবগত ছিলনা। তখনকার মানুষের নৈতিক চরিত্র ছিল উন্নত এবং তাঁদের পারস্পরিক লেন-দেন ও আদান-প্রদানের ভিত্তি ছিল বিশ্বাস এবং উন্নত নৈতিকতা। কিন্ত কালের বিবর্তনে মানুষের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশরা স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির পাশাপাশি জাল জালিয়াতি রোধ এবং রাজস্ব আদায় সুশৃংখল করার উদেশ্যে দলিল রেজিস্ট্রেশন প্রথা প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
রেজিস্ট্রেশন আইনের ক্রম ইতিহাসঃ
রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি এ উপমহাদেশের মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত বিধায় রেজিস্ট্রেশন আইন আকস্মিকভাবে প্রচলনা না করে প্রথমদিকে দলিল রেজিস্ট্রেশন ঐচ্ছিক রাখা হয় এবং কতিপয় রেজিস্ট্রিকৃত দলিল অরেজিস্ট্রিকৃত দলিলের বিবেচনায় অগ্রগণ্য হবে এমন বিধান রাখা হয়। ধীরে ধীরে এ উপমহাদেশে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু হয় এবং এ উদ্দেশ্যে কিছু আইন প্রণীত হতে থাকে। এ সমস্ত আইনের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলঃ
১৭৮১ সনের বেঙ্গল স্ট্যাটিউট।
১৭৯৩ সনের বেঙ্গল রেগুলেশন ৩৬।
১৮০২ সনের বোম্বে রেগুলেশন ৪ এবং মাদ্রাজ রেগুলেশন ১৭।
এসমস্ত আইনের খসড়া ইংল্যান্ডের ‘ইয়র্কশায়ার রেজিস্ট্রি এ্যাক্টে’র মডেলে করা হয়েছিল। সময়ের প্রয়োজনে সাধারন মানুষের কাছে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হওয়ায় এ সমস্ত প্রাদেশিক আইনের পরিবর্তে সমস্ত ব্রিটিশ ভারতের জন্য রেজিস্ট্রেশন আইন জারি করা হয়। এ সমস্ত আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
১৮৬৪ সনের ১৬ নং আইন।
১৮৬৬ সনের ২০ নং আইন।
১৮৭১ সনের ৮ নং আইন।
১৮৭৭ সনের ৩ নং আইন এবং
সর্বশেষ ১৯০৮ সনের ১৬ নং আইন যার ভিত্তিতে বর্তমান বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
১৯৪৭ সনে ইংরেজগণ এ উপমহাদেশের শাসনভার ত্যাগ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য আইনের মত ১৯০৮ সনের রেজিস্ট্রেশন আইনও উভয় দেশে বহাল থাকে। পরবর্তীতে উভয় দেশেই উক্ত আইন প্রয়োজন অনুসারে সময় সময় সংশোধন ও পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর রেজিস্ট্রেশন আইনটি সংবিধানের ১৪৯ নং অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে বহাল থাকে।